কীর্তিনাশা শরীয়তপুর জেলার অন্যতম নদী। এটি পদ্মার একটি শাখানদী ।
কীর্তিনাশার উৎপত্তি ও বিস্তারঃ
কীর্তিনাশা নদীর উৎসমুখ নড়িয়া উপজেলার পদ্মা নদী থেকে শুরু হয়ে শরীয়তপুর জেলা শহরের ভিতর দিয়ে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে মাদারীপুর জেলার কালকিনি দিয়ে আড়িয়াল খাঁ নদে মিলিত হয়েছে। শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার পদ্মা নদী থেকে উৎপন্ন কীর্তিনাশার দৈর্ঘ্য ৪০ কিলোমিটার ও প্রস্থ ১২০ মিটার। গভীরতা ৬ মিটার এবং অববাহিকা ১৫০ বর্গকিলোমিটার। এটি একটি মৌসুমি নদী এবং জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত সাধারণত প্রবাহহীন থাকে।
নড়িয়া পৌরসভা, ভোজেশ্বর বন্দর ও শরীয়তপুর পৌরসভা এই নদীর পাড়ে অবস্থিত।
কীর্তিনাশার নামকরণঃ
এক সময় জেলার ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা অর্থাৎ রাজা রাজবল্লভ এবং চাদঁরায়-কেদাররায়ের নানা প্রকার কীর্তি কীর্তিনাশা নদীর স্রোতে নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার কারণে অর্থাৎ নাশ হওয়ার কারণে এ নদীর নামকরণ করা হয়েছে কীর্তিনাশা ।
যতীন্দ্রমোহন রায় তাঁর ‘ঢাকার ইতিহাস’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘পদ্মার যে অংশ বিক্রমপুর ভেদ করিয়া মেঘনাদের সহিত মিলিত হইয়াছে, উহার নাম কীর্তিনাশা। প্রকৃত প্রস্তাবে পদ্মার গতি বিক্রমপুরের পশ্চিম দিক পরিত্যাগ করিয়া মরাপদ্মা নামে এবং প্রবলাংশ, যাহা প্রায় শত বৎসরের মধ্যে উদ্ভব হইয়া প্রাচীন কালীগঙ্গা নদীর বিলোপ সাধন করিয়াছে, উহাই কীর্তিনাশা নামে পরিচিত।’
তাঁর ভাষায়, ‘মি. রেনেল ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দে পূর্ববঙ্গের যে মানচিত্র অঙ্কিত করিয়াছিলেন, তাহাতে দেখা যায়, পদ্মা নদী বিক্রমপুরের বহু পশ্চিম দিক দিয়া প্রবাহিত হইয়া ভবনেশ্বরের সহিত সম্মিলিত হইয়াছিল। তখন ‘কীর্তিনাশা’ বা ‘নয়াভাঙ্গনী’ নামে কোনো নদীর অস্তিত্ব ছিল না। বিক্রমপুরের অন্তর্গত রাজনগর ও ভদ্রেশ্বর গ্রামের মধ্যে একটি অপ্রশস্ত জলপ্রণালী মাত্র বিদ্যমান ছিল। উহা প্রাচীন কালীগঙ্গার শেষ চিহ্নমাত্র। শ্রীপুর, নওপাড়া, ফুলবাড়িয়া, মুলফৎগঞ্জ প্রভৃতি প্রসিদ্ধ গ্রামসমূহ কালীগঙ্গার তটে বিদ্যমান ছিল। পরে শত বৎসরের মধ্যে কীর্তিনাশা নদীর উৎপত্তি হইয়া বিক্রমপুরের বক্ষদেশ ভেদ করিয়া এবং নয়াভাঙ্গনী নদী উদ্ভুত হইয়া ইদিলপুরের প্রান্তদেশ ধৌত করিয়া পদ্মা ও মেঘনা পরস্পর সংযুক্ত করিয়া দিয়াছে।’
বিআইডব্লিউ টিএর প্রকাশনা হতে জানা যায়, কীর্তিনাশা নাম হওয়ার পেছনে রয়েছে এর বিধ্বংসী রূপ। ভীষণ সংহার মূর্তি ধারণ করে নানা প্রাচীন কীর্তি নাশ বা ধ্বংস করেছে নদীটি। বিক্রমপুরের জমিদার চাঁদ রায় ও কেদার রায়ের এবং নওপাড়ার চৌধুরীদের কীর্তি ধ্বংস করায় নদীটির নাম হয়েছে কীর্তিনাশা। পরে মহারাজ রাজবল্লভের কীর্তিনিকেতন ভেঙে নামের সার্থকতা প্রমাণ করেছে। কীর্তিনাশা প্রথমে ‘রথখোলা’ পরে ‘ব্রহ্মবধিয়া’ ও ‘কাথারিয়া’ এবং সবশেষে ‘কীর্তিনাশা’ নামে পরিচিত।
আপনার মতামত দিন