আবু ইসহাক

আবু ইসহাক

কথাসাহিত্যিক, অভিধান-প্রণেতা।

‘বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার’ (১৯৬৩), ‘একুশে পদক’ (১৯৯৭), ‘স্বাধীনতা পদক’ (মরণোত্তর, ২০০৪)  প্রাপ্ত শরীয়তপুরবাসী লেখক। 

বাংলাদেশের প্রথম অনুদান প্রাপ্ত চলচ্চিত্র  “সূর্যদীঘল বাড়ি” রচয়িতা

জন্ম ১৯২৬ সালের ১ নভেম্বর শরিয়তপুর জেলার শিরঙ্গল গ্রামে । ২০০৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় তাঁর মৃত্যু হয়।

১৯২৬ সালের ১ নভেম্বর (১৫ কার্তিক ১৩৩৩ বাংলা) শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া থানাধীন শিরঙ্গল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আবু ইসহাক। তাঁর বাবা মৌলভী মোহাম্মদ এবাদুল্লাহ কাঠের ব্যবসা করতেন। এছাড়া গ্রামের কিছু কৃষি জমির মালিকও ছিলেন মোহাম্মদ এবাদুল্লাহ। আবু ইসহাকের মা আতহারুন্নিসা ছিলেন সাধারণ একজন গৃহবধূ। ছয় ভাইবোনের মধ্যে আবু ইসহাক ছিলেন পঞ্চম। আবু ইসহাকের বাবা কাঠের ব্যবসায়ী হলেও শিক্ষা-সংস্কৃতির প্রতি তাঁর বিশেষ আগ্রহ ছিল। ছেলেমেয়েদের মানসিক বিকাশের কথা চিন্তা করে তিনি ওই সময়ের বিখ্যাত দুটি বাংলা সাময়িকপত্রের গ্রাহক হয়েছিলেন। নিয়মিত গ্রাহক হওয়ায় ‘সওগাত’ ও ‘দেশ’ পত্রিকা নিয়মিত পেতেন আবু ইসহাক ও তাঁর ভাইবোনেরা।

আবু ইসহাক দাম্পত্যজীবন শুরু করেন ১৯৫০ সালে। পাকিস্তানে থাকার সময় স্ত্রী সালেহা ইসহাক ছিলেন ইসলামাবাদ সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট হাইস্কুলের শিক্ষিকা। দেশে ফেরার পর শিক্ষকতা করেছেন মতিঝিল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। এই স্কুল থেকে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। আবু ইসহাক ও সালেহা ইসহাক দম্পতির তিন সন্তান। তাঁরা সবাই নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত।

১৯৪২ সালে শরীয়তপুর জেলার উপসী বিজারী তারাপ্রসন্ন উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় থেকে বৃত্তি নিয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন আবু ইসহাক। ১৯৪৪ সালে ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। সময়টি ছিল বাংলাদেশ তথা সারা বিশ্বের জন্যই গভীরতর সংকটের। একদিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আর অন্যদিকে বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ ও সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধির রাজনীতি। পারিবারিক আর্থিক সংকট ও রাজনীতিবিদদের উৎসাহে পড়াশোনা অসমাপ্ত রেখেই আবু ইসহাক চাকরিতে যোগ দেন। বাংলা সরকারের বেসরকারি সরবরাহ বিভাগের পরিদর্শকের চাকরি নিয়ে তিনি চলে আসেন নারায়ণগঞ্জে। নারায়ণগঞ্জ থেকে কলকাতা এবং পরে পাবনা। ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের সময় আবু ইসহাকের কর্মস্থল ছিল পাবনা। ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত তিনি সেখানেই ছিলেন। দেশভাগের মাধ্যমে পূর্ববঙ্গ পাকিস্তানের অংশ হয়ে যায়। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর বেসরকারি সরবরাহ বিভাগ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। আবু ইসহাককে আত্মীকরণ করা হয় পুলিশ ও নিরাপত্তা বিভাগে। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর সরকারি চাকুরেদের অনেকের পদোন্নতি ঘটলেও আবু ইসহাকের ক্ষেত্রে ঘটে পদাবনতি। আগে ছিলেন পরিদর্শক, পুলিশ বিভাগে আত্মীকরণের পর হন সহকারী পরিদর্শক। একই পদে থেকে যেতে হয় দীর্ঘ আট বছর। এই চাকরিতে ১৯৪৯ থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত আবু ইসহাকের কর্মস্থল ছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকা। ১৯৫৬ সালে তাঁর ভাগ্যে পদোন্নতি জোটে। পুলিশ ও নিরাপত্তা বিভাগের পরিদর্শক করে তাঁকে করাচিতে বদলি করা হয়। ১৯৬০ সালে চাকরিরত অবস্থায় করাচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাস করেন তিনি। এরপর আবু ইসহাকের বেশ কয়েক দফা দ্রুত পদোন্নতি ঘটে। ১৯৬৬ সালে তাঁকে রাওয়ালপিন্ডিতে বদলি করা হয়। ১৯৬৯ সালে সহকারী কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা হিসেবে পদোন্নতি দিয়ে তাঁকে করাচি থেকে বদলি করা হয় ইসলামাবাদে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত তিনি ইসলামাবাদেই ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশে না থাকলেও বাঙালি হওয়ার কারণে আবু ইসহাককে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ সহ্য করতে হয়েছে। ১৯৭১ থেকে ১৯৭৩ পর্যন্ত প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাঁচার চেষ্টায় লড়তে হয়েছে তাঁকে। পাকিস্তানে আটকে পড়া অবস্থা থেকে আবু ইসহাক বহু কষ্টে পালিয়ে যান আফগানিস্তানে। ভারত ও আফগানিস্তান সরকারের সহায়তায় ১৯৭৩ সালে কাবুল ও নয়াদিল্লি হয়ে দেশে ফিরে আসতে সক্ষম হন তিনি। দেশে ফেরার পর বাংলাদেশের নবগঠিত নিরাপত্তা বিভাগ তাঁকে যথার্থ সম্মানের সাথে বরণ করে নেয়। তাঁকে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) উপ-পরিচালক করা হয়। এর পরে ১৯৭৪ সালে তিনি মিয়ানমারের (বার্মা) আকিয়াব শহরে বাংলাদেশ কনসুলেটে ভাইস-কনসাল হিসেবে নিয়োগ পান। ১৯৭৬ সালে আবু ইসহাক কলকাতায় বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনে ফার্স্ট সেক্রেটারি হিসেবে যোগ দেন। ১৯৮৯ সালে তাঁকে আবার বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা হয় এবং এনএসআই’র খুলনা বিভাগের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। চাকরি জীবনের শেষ পর্যায়ে খুলনার খালিশপুর এলাকায় ‘সূর্যদীঘল বাড়ী’ নামে একটি বাড়ি নির্মাণ করেছিলেন আবু ইসহাক। সে বাড়িতে অবশ্য তিনি বেশিদিন থাকেননি। ১৯৮৪ সালের ১ নভেম্বর চাকরি থেকে অবসর নেন তিনি। অবসর নেওয়ার পর থেকে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত ঢাকার বড় মগবাজার এলাকার ‘তাহমিনা মঞ্জিল’ নামের একটি ভাড়া বাসায় অবস্থান করেছেন তিনি। 

প্রথম দিকে খুব বেশি দূর যেতে চাননি তিনি। লিখতে বসেছিলেন বিশেষিত শব্দের ছোটখাটো একটা অভিধান। লিখতে লিখতে তিরিশ বছর কেটে গেল। কখন কেটে গেল টেরই পেলেন না। নিজের বিশাল কাজ দেখে পরে নিজেই অবাক হয়ে গেলেন। শেষ দিকে এসে এ কাজে পুরো পরিবার নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন।

কাজটাও বেশ অদ্ভুত। নানা ধরনের বইপুস্তক ও পত্রপত্রিকা চষে শব্দ বের করতেন। শব্দগুলো ছোট ছোট কার্ডে লিখে নিতেন। কার্ডগুলো রাখতেন গুঁড়ো দুধের খালি কৌটায়। পরে সেগুলো বাছাই করে সুতোয় মালা গেঁথে সাজাতেন। এই মালা গাঁথার কাজ ও বিশেষিত শব্দের কার্ড গুছিয়ে দিতেন স্ত্রী, কন্যা, পুত্র ও নাতি-নাতনিরা। এভাবে দুই লাখেরও বেশি বিশেষিত শব্দ নিয়ে মালা গাঁথলেন তিনি। শব্দের এই মালাগুলো পুস্তক আকারে রূপ নিয়ে হল বাংলা ভাষার মূল্যবান সম্পদ ‘সমকালীন বাংলা ভাষার অভিধান’।
অভিধান প্রণেতা হিসেবেও আবু ইসহাকের একটি বিশিষ্ট পরিচয় আছে। তিনি সমকালীন বাংলা ভাষার অভিধান (২ খন্ড, ১৯৯৩, ১৯৯৮) রচনা করে বাংলা কোষগ্রন্থের পরিধিকে বাড়িয়ে তুলেছেন। তাঁর প্রণীত অভিধানের বিশেষত্ব হলো শব্দের শুধু অর্থ নয়, সব ধরনের প্রতিশব্দ বা সমর্থক প্রদান। তাঁর অভিধানে ‘অন্ধকার’ শব্দের ১২৭টি সমর্থক শব্দ আছে।

বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য আবু ইসহাক ১৯৬৩ সালে বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৮১ সালে আবু ইসহাককে সুন্দরবন সাহিত্য পদক দেওয়া হয়। ১৯৯০ সালে বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ সাহিত্য পদক লাভ করেন। ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে একুশে পদকে ভূষিত করে। পরবর্তীতে ২০০৪ সালে স্বাধীনতা পদক লাভ করেন তিনি। ২০০৬ সালে আবু ইসহাক নাটক বিভাগে শিশু একাডেমী পদক পান। এছাড়া অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।

আবু ইসহাকের উপন্যাস ও গল্পের অনুবাদ এবং সেগুলো অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্র দেশের বাইরে থেকে দেশের জন্য সম্মান বয়ে এনেছে। তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘সূর্যদীঘল বাড়ী’ উর্দু ও চেক ভাষায় অনূদিত হয়েছে। উপন্যাসটির উর্দু অনুবাদ ‘আসেবি ঘর’ ১৯৬৯ সালে হাবিব ব্যাংক সাহিত্য পদক লাভ করে। ‘সূর্যদীঘল বাড়ী’ অবলম্বনে ১৯৭৯ সালে চলচ্চিত্রকার মসিহউদ্দিন শাকের একই নামে যে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন সেটি জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের পুরস্কারসহ সাতটি এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পাঁচটি পুরস্কার লাভ করে। আবু ইসহাকের লেখা ‘মহাপতঙ্গ’ গল্প অবলম্বনে ইংরেজি ভাষায় নির্মিত কার্টুন ছবি “হু ফ্লিউ ওভার দ্য স্প্যারো’স নেস্ট” সুইজারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ১৯৮১ সালের চলচ্চিত্র উৎসবে মানবিক আবেদন সৃষ্টির জন্য শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ চলচ্চিত্র হিসেবে নির্বাচিত হয়।

 বাংলাদেশের কথাসাহিত্যের উজ্জ্বলতম নক্ষত্রগুলোর একটির নাম আবু ইসহাক। বাংলা সাহিত্যে যাঁরা লিখেছেন কম, কিন্তু যা লিখেছেন তা অসাধারণ, তাঁদেরই একজন তিনি। সব মিলিয়ে তিনটি উপন্যাস, ছোটগল্পের দুটি সংকলন, একটি নাটক, একটি স্মৃতিকথা ও একটি অভিধান রচনা করেছেন আবু ইসহাক। এর বাইরে অগ্রন্থিত আরও কিছু রচনা আছে। মাত্র ২০ বছর বয়সে লেখা প্রথম উপন্যাস ‘সূর্যদীঘল বাড়ী’ দিয়ে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্যসমাজে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন আবু ইসহাক।

উচ্চ মাধ্যমিক পাসের পর বেসরকারি সরবরাহ বিভাগের পরিদর্শকের চাকরি নিয়ে আবু ইসহাক প্রথম কাজ শুরু করেন নারায়ণগঞ্জে। নারায়ণগঞ্জ তখন দুর্ভিক্ষ কবলিত। নারায়ণগঞ্জে তাঁর বন্ধু কবি আনিসুল হক চৌধুরী দেশের দুর্ভিক্ষের চিত্র একটি উপন্যাসের মাধ্যমে তুলে ধরার ব্যাপারে তাঁকে উৎসাহিত করেন। আবু ইসহাকের সংবেদশীল মনেও বাংলাদেশের মানুষের দুর্যোগ, দুর্ভোগ, কুসংস্কার ও বেঁচে থাকার সংগ্রাম গভীরভাবে নাড়া দিয়েছিল। বিশ্বযুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ ও সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধির খপ্পরে পড়ে দেশের অধিকাংশ মানুষই তখন বাঁচার আশায় দিশেহারা। নারায়ণগঞ্জে থাকার সময় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের ট্রেনের একশ্রেণির যাত্রীর মধ্যে এই দিশেহারাদের দেখছিলেন আবু ইসহাক। যারা নিঃস্ব হয়ে পেটের ভাত জোগাড়ের আশায় শহরে গিয়েছিল, কিন্তু শহরে কোনো ভরসা না পেয়ে তারা গ্রামে ফিরে আসে। গ্রামে ফিরেও তারা বাঁচার আশ্বাস পায় না। এইসব দিশেহারা, নিঃস্ব, অসহায় মানুষদের নিয়ে আবু ইসহাক নারায়ণগঞ্জে থাকাকালেই ১৯৪৪ সালে তাঁর প্রথম ও অন্যতম উপন্যাস ‘সূর্যদীঘল বাড়ী’ রচনার কাজ শুরু করেন । দীর্ঘ চার বছর পর ১৯৪৮ সালে এটি লেখার কাজ শেষ হয়। ১৯৫০ সাল থেকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত এটি ধারাবাহিকভাবে ছাপা হয় ‘নওবাহার’ নামক মাসিক পত্রিকায়। উপন্যাসটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় রচনার সাত বছর পর ১৯৫৫ সালে। প্রথম গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় কলকাতা থেকে এবং পরে বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত হয় ১৯৬২ সালে। ‘সূর্যদীঘল বাড়ী’-তে এমন অনেক কিছুই আছে যা দেশে ও বিদেশে অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

সূর্যদীঘল বাড়ী উপন্যাস ও চলচ্চিত্র সম্পর্কে আরো পড়ুন

সূর্য দীঘল বাড়ী

উচ্চ মাধ্যমিক পাসের পর বেসরকারি সরবরাহ বিভাগের পরিদর্শকের চাকরি নিয়ে আবু ইসহাক প্রথম কাজ শুরু করেন নারায়ণগঞ্জে। নারায়ণগঞ্জ তখন দুর্ভিক্ষ কবলিত। নারায়ণগঞ্জে তাঁর বন্ধু কবি আনিসুল হক চৌধুরী দেশের দুর্ভিক্ষের চিত্র একটি উপন্যাসের মাধ্যমে তুলে ধরার ব্যাপারে তাঁকে উৎসাহিত করেন। আবু ইসহাকের সংবেদশীল মনেও বাংলাদেশের মানুষের দুর্যোগ, দুর্ভোগ, কুসংস্কার ও বেঁচে থাকার সংগ্রাম গভীরভাবে নাড়া দিয়েছিল। বিশ্বযুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ ও সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধির খপ্পরে পড়ে দেশের অধিকাংশ মানুষই তখন বাঁচার আশায় দিশেহারা। নারায়ণগঞ্জে থাকার সময় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের ট্রেনের একশ্রেণির যাত্রীর মধ্যে এই দিশেহারাদের দেখছিলেন আবু ইসহাক। যারা নিঃস্ব হয়ে পেটের ভাত জোগাড়ের আশায় শহরে গিয়েছিল, কিন্তু শহরে কোনো ভরসা না পেয়ে তারা গ্রামে ফিরে আসে। গ্রামে ফিরেও তারা বাঁচার আশ্বাস পায় না। এইসব দিশেহারা, নিঃস্ব, অসহায় মানুষদের নিয়ে আবু ইসহাক নারায়ণগঞ্জে থাকাকালেই ১৯৪৪ সালে তাঁর প্রথম ও অন্যতম উপন্যাস ‘সূর্যদীঘল বাড়ী’ রচনার কাজ শুরু করেন । দীর্ঘ চার বছর পর ১৯৪৮ সালে এটি লেখার কাজ শেষ হয়। ১৯৫০ সাল থেকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত এটি ধারাবাহিকভাবে ছাপা হয় ‘নওবাহার’ নামক মাসিক পত্রিকায়। উপন্যাসটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় রচনার সাত বছর পর ১৯৫৫ সালে। প্রথম গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় কলকাতা থেকে এবং পরে বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত হয় ১৯৬২ সালে। ‘সূর্যদীঘল বাড়ী’-তে এমন অনেক কিছুই আছে যা দেশে ও বিদেশে অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

‘পদ্মার পলিদ্বীপ’

আবু ইসহাকের দ্বিতীয় উপন্যাস ‘পদ্মার পলিদ্বীপ’। ‘পদ্মার পলিদ্বীপ’ লেখা শুরু করেছিলেন ১৯৬০ সালে এবং শেষ করেন ১৯৮৫ সালে। এটি প্রথমে বাংলা একাডেমীর পত্রিকা ‘উত্তরাধিকার’ এ প্রকাশিত হয় ‘মুখরমাটি’ নামে। পরে গ্রন্থাকারে প্রকাশের সময় এটির নাম রাখা হয় ‘পদ্মার পলিদ্বীপ’। ব্রিটিশ শাসিত ভারতবর্ষ অর্থাৎ দেশভাগের আগের সময়কে এ উপন্যাসে ধারণ করা হয়েছে। পদ্মার বুকে জেগে ওঠা নতুন চরের দখল নিয়ে এ উপন্যাসের কাহিনী আবর্তিত হয়েছে।

আবু ইসহাকের তৃতীয় ও সর্বশেষ উপন্যাস ‘জাল’। ১৯৮৮ সালে ‘আনন্দপত্র’ নামের একটি পত্রিকার ঈদসংখ্যায় এটি প্রথম ছাপা হয়। গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় এর পরের বছর। প্রকাশের দিক থেকে তৃতীয় উপন্যাস হলেও এটি লেখা হয় ১৯৫০-এর দশকে। এটি লেখার সময় পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে আবু ইসহাক কয়েকটি জাল নোটের মামলার তদন্ত করছিলেন। শোনা যায়, ‘সূর্যদীঘল বাড়ী’ প্রকাশের জন্য প্রকাশকদের মনোযোগ আকর্ষণ করতেই তিনি গোয়েন্দা কাহিনীর আদলে লিখেছিলেন ‘জাল’। পরে ‘সূর্যদীঘল বাড়ী’ এতটাই আলোড়ন তোলে যে তিনি নিজের নামের প্রতি অবিচার হতে পারে ভেবে ‘জাল’কে প্রকাশ না করে বাক্সবন্দি করে রাখেন দীর্ঘ ৩৪ বছর।

 

 

this page is Under Development.

আপনার মতামত দিন