শহীদ সরদার মহিউদ্দিন

                        শহীদ সরদার মহিউদ্দিন

পদবী : শহীদ মুক্তিযোদ্ধা

১০ অক্টোবর ১৯৭১ তারিখে শহীদ হন।

তার নামে ভেদরগঞ্জ-শরীয়তপুর সড়কটিকে শহীদ মহিউদ্দিন সড়ক নামে নামকরণ করেছে। 

১৯৭১ সালের ১০ অক্টোবর ভেদরগঞ্জ থানা হানাদার মুক্ত করতে গিয়ে শহীদ হন সরদার মহিউদ্দিন। ১০ অক্টোবর ১৯৭১ এই দিনে সকাল বেলায় সহযোগি মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ভেদরগঞ্জ থানা আক্রমন করেন তিনি। সারাদিন যুদ্ধ করে মুক্তির দাঁড়প্রান্তে এসে শেষ বিকেলে মটারসেলের নিশানা ঠিক করতে গিয়ে মাথা উচু করার সাথে সাথে থানা ভবনের দোতালা থেকে ছোরা বুলেটে শহীদ হন তিনি। সরদার মহিউদ্দিনশহীদ হওয়ার সংবাদে মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি চার দিক থেকে হাজারো জনতা ছুটে আসেন। জনতার ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত পশ্চিমা বাহিনী অন্ধকারে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে জনতা তাদের পিটিয়ে হত্যা করে  ভেদরগঞ্জে খালে ভাসিয়ে দেয়। মুক্ত হয় ভেদরগঞ্জ থানা।

এ শহীদকে এলাকাবাসী সসম্মানে সাজনপুর বাজার কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে ও মহিষার ইউনিয়ন পরিষদের সামনে সমাহিত করে। তার নামে ভেদরগঞ্জ-শরীয়তপুর সড়কটিকে শহীদ মহিউদ্দিন সড়ক নামে নামকরণ করেছে।
দৈনিক হুংকার পত্রিকার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, দোকানের সাইন বোর্ডে নাম লেখা বাদে অন্য কোথাও শহীদ মহিউদ্দিন সড়কের চিহ্ন মাত্র নেই। তার নামে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে শহীদ মহিউদ্দিন স্মৃতি সংসদ ।
শহীদ মহিউদ্দিনের স্ত্রী নুরজাহান বেগম বলেন, “আমার স্বামী যেদিন শহীদ হন আমার ছোট সন্তান শিমুল এর বয়স মাত্র ১৭ দিন। আতুর ঘরে আমার সাথে বাহির থেকে দেখা করে চলে যান সে। যাওয়ার সময় শুধু বলে যান স্বাধীনতা নিয়ে ঘরে ফিরব। দেশ স্বাধীন হয়েছে ঠিকই তার আর ঘরে ফেরা হয়নি। স্বাধীনতার পরে আমরা দীর্ঘদিন সামাজিক অনাদর, অবহেলায় কাটিয়েছি। আমার বড় ছেলে জাকির আলম শামিম বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর একজন গর্বিত সদস্য হিসেবে সার্জেন্ট পদে বর্তমানে পিজিআর এ দায়িত্বরত আছে। ছোট ছেলে শিমুল মালয়েশিয়ায় কর্মরত। বড় মেয়ে তার সংসার নিয়ে সুখেই আছে। আমাদেরকে বর্তমান সরকার শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের যে ভাতা দেয় তাতে আমি এখন সুখে-শান্তিতে দিন কাটাচ্ছি। আমার সরকারের কাছে অন্য কোন দাবী না থাকলেও শহীদ মহিউদ্দিনের নামে নামকরণকৃত সড়কের সীমানা নির্ধারণ ও নাম ফলক নির্মাণ করলে আমার অতিত কষ্টের কিছুটা হলেও লাঘব হবে”।
শহীদের বড় ছেলে জাকির আলম শামীম বলেন, “আমাদের বাবাকে আমরা দেখিনি। তার আদর ও পাইনি। তারপরেও আমরা গর্বিত, আমার বাবা আমাদের দেশের মুক্তির জন্য জীবন দিয়েছে। আমাদের বাবাকে আমরা কোন দিন পৃথিবীতে পাবোনা। তার স্মৃতি হিসেবে শহীদ মহিউদ্দিন সড়কের নাম ফলক স্থাপন করার জন্য আমরা স্থানীয় ভাবে বিভিন্ন জনের কাছে দাবী জানিয়েছি কিন্তু কেউ এ উদ্যোগটি গ্রহন করেনি। আমরা আশা করি বর্তমান মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকাকালিন সময়ে জাতির জনকের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশেই আমাদের মত মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানের সামান্য দাবীটুকু পুরন হবে”।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন শহীদ সরদার মহিউদ্দিন এর স্মৃতি স্মরণে  একটি সম্মেলন কেন্দ্রের নামকরণ করেছে  “শহীদ আক্কাস শহীদ মহিউদ্দিন সম্মেলন কক্ষ”। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, শহীদ আক্কাস স্বাধীনতা যুদ্ধে আরেকজন বীর শহীদ মুক্তিযোদ্ধা তিনি ১৯ জুলাই ১৯৭১ সালে শহীদ হন।
—————————————————-—
তথ্য সুত্র:

  • দৈনিক হুংকার, 10 অক্টোবর 2017
  • বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ – সপ্তম খন্ড, প্রকাশক বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, প্রকাশ কাল 2008।

আপনার মতামত দিন