শরীয়তপুর জেলা ও এর উপজেলার নামকরণের ইতিহাস

ইতিহাস সমৃদ্ধ বিক্রমপুরের দক্ষিণাঞ্চল এবং প্রাচীন বরিশালের ইদিলপুর পরগণার কিছু অংশ নিয়ে বর্তমান শরীয়তপুর জেলা গঠিত। বাংলাদেশের মুক্তির সংগ্রামে শরীয়তপুরবাসীর ভূমিকাও উল্লেখযোগ্য। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে জেলাটি ফরিদপুরের মাদারীপুর মহকুমার অন্তর্ভূক্ত ছিল। ১৯৭৭ সালের ৩ নভেম্বর বিশিষ্ট সমাজ সংস্কারক ও ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেতা হাজী শরীয়ত উল্লাহর নামানুসারে শরীয়তপুর নামকরণ করা হয়।
শরীয়তপুর জেলায় মোট ৬ টি উপজেলা রয়েছে : শরীয়তপুর সদর, জাজিরা, নড়িয়া, ভেদরগঞ্জ, ডামুড্যা, ও গোসাইরহাট।
শরীয়তপুর সদর উপজেলাঃ
ইতিহাস সমৃদ্ধ বিক্রমপুরের দক্ষিণাঞ্চল এবং প্রাচীন বরিশালের ইদিলপুর পরগণার কিছু অংশ নিয়ে বর্তমান শরীয়তপুর জেলা গঠিত। বাংলাদেশের মুক্তির সংগ্রামে শরীয়তপুরবাসীর ভূমিকাও উল্লেখযোগ্য। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে জেলাটি ফরিদপুরের মাদারীপুর মহকুমার অন্তর্ভূক্ত ছিল। ১৯৭৭ সালের ৩ নভেম্বর বিশিষ্ট সমাজ সংস্কারক ও ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেতা হাজী শরীয়ত উল্লাহর নামানুসারে শরীয়তপুর নামকরণ করা হয়।

জাজিরা উপজেলাঃ
জাজিরার নামকরন সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোন তথ্য জানা নেই। জাজিরা মুলত পদ্মা নদীর একটি চর। আরবিতে জাজিরা جزيرة অর্থ- দ্বীপ। এ শব্দ হতেই পূরোনো যুগের কোন মুসলিম নেতা এর নাম লিখেছিলেন মর্মে কথিত আছে। আরবী ভাষায় দ্বীপকে বলা হয় জাজিরা। দ্বীপ আর চরকে সমার্থক ভেবে ভুমি জরিপের সময় হয়তো জাজিরা নামে চিহ্নিত করা হয়েছে।
নড়িয়া উপজেলাঃ
উপজেলাটির উত্তরে পদ্মা নদী ও মুন্সিগঞ্জ জেলা দক্ষিণে ভেদরগঞ্জ ও শরীয়তপুর সদর উপজেলা ও জাজিরা উপজেলা দ্বারা বেষ্টিত।নড়িয়া উপজেলার নামকরণ সম্পর্কে কোন সুস্পষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি । নদী বিধৌত এলাকা বলে প্রতিবছর এর আয়তন স্থানান্তরিত হয়ে পড়ত। অর্থাৎ এর অবস্থান নড়ে যেত বা নইরা যেত। আঞ্চলিক উচ্চারণে নইরা থেকে নইরা<নৈরা<নরিয়া<নড়িয়া নামকরণ হতে পারে বলে ধারণা করা যায়।তবে কথিত আছে নড়িয়া নামক এক বিরাট মৌজার নামানুসারেই উপজেলার নামকরণ নড়িয়া করা হয় ।
ভেদরগঞ্জ উপজেলাঃ
ভেদরগঞ্জ এর নামকরন নিয়ে বিভিন্ন জনের বিভিন্ন মতামত রয়েছে।
প্রথমত, প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ও প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব বিক্রমপুর পরগনার জমিদার ভেদার উদ্দিন ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে এই এলাকার সফরে আসেন এবং এই সৈয়দ ভেদার উদ্দিন শাহের প্রয়াসে ভেদরগঞ্জ থানা প্রতিষ্ঠিত হয়। তার নামানুসারেই ভেদরগঞ্জ এর নামকরন করা হয়। উল্লেখ্য যে ভেদরগঞ্জ এক সময় ভেদার উদ্দিন শাহ এর জমিদারী এলাকার অন্র্তগত। দ্বিতীয়ত, ভেদরগঞ্জের নামকরন নিয়ে আরো একটি প্রবাদ আছে। এই প্রবাদ কাদা প্রবাদ নামে পরিচিত । ‘ভেদর’ শব্দের অর্থ কাদা। একসময় এই এলাকায় প্রচুর কাদা ছিল। কাদার জন্য মানুষের হাটা চলার ব্যঘাত ঘটত। তাই এই এলাকার নাম একে একে জনমুখে ভেদরগঞ্জ নামের পরিচিতি লাভ করে।
তৃতীয়ত, অনেকের মতে, এই এলাকায় প্রচুর বেদে ছিল। নদীর পাড়ে সবসময় অসংখ্য বেদে বহর থাকত। তাই এই এলাকার নাম ভেদরগঞ্জ হয়েছে। আধুনিক গবেষণায় প্রবাদ দুটি নিছক প্রবাদ বলে প্রতিয়মান হয়েছে।মুলত ভেদার শাহ এর নাম হতে ভেদরগঞ্জ নামের উৎপত্তি। বর্তমানে ভেদরগঞ্জ নামে প্রচলিত হলেও বিভিন্ন সময় এর নাম বেদেরগঞ্জ, ভেদেরগঞ্জ,ছিল।




ডামুড্যা উপজেলাঃ
এক সময়ে তৎকালীন মাদারীপুর মহকুমার বিখ্যাত বাংলা কবি নবীন চন্দ্র সেন মহকুমা প্রশাসক ছিলেন। নবীন চন্দ্র সেনের আমন্ত্রণে ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর একদা মাদারীপুর সফরে এসেছিলেন এবং মাদারীপুর হতে নবীন চন্দ্র সেনের সাথে বর্তমান ডামুড্যা সফরেও আসেন। ডামুড্যার পূর্ব পাশের নদী তৎকালীন ভারতের দামোদর নদীর মতো ক্ষীপ্ত ছিল। ঈশ্বার চন্দ্র বিদ্যাসাগর বলেছিলেন এই নদী দামোদর নদীর মত। এই নদী সাঁতার দিয়ে বিদ্যাসাগর মায়ের সাথে দেখা করতে যেতেন। কারণ বিদ্যাসাগরের খেঁয়ার পয়সার অভাবে সাঁতার কেটে মাকে দেখতে যেতে হতো। এই কথা শুনে মহকুমা প্রশাসক নবীন চন্দ্র সেন বিদ্যাসাগরের সম্মানে এই এলাকার নাম রাখেন দামোদর। দামোদর শব্দের একটি অর্থ পবিত্র জল। হিন্দু বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের সর্বোচ্চ দেবতা বিষ্ণুর একটি নাম দামোদর। হিন্দু ধর্মে আছে- দমের দ্বারা যিনি উচ্চস্থান পাইয়াছেন, তিনিই দামোদর। বেদে আছে, বিষ্ণু তপস্যা করিয়া বিষ্ণুত্ব লাভ করিয়াছেন, নহিলে তিনি ইন্দ্রের কনিষ্ঠ মাত্র। শঙ্করাচার্য দামোদর শব্দের অর্থ গ্রহণ করিয়াছেন। তিনি বলেন, “দমাদিসাধনেন উদরা উৎকৃষ্টা গতির্যা তয়া গম্যত ইতি দামোদরঃ।” মহাভারতেও আছে, “দমাদ্দামোদরং বিদুঃ।” তবে এর সাথে ডামুড্যার দামোদর নদীর কোন সম্পর্ক আছে কিনা তা ইতিহাসে উল্লেখ নাই। তাই আঞ্চলিক উচ্চারণে দামোদর> দামোদরিয়া > ডামুদিয়া >ডামুড্যা নাম ধারণ করছে।
যে মৌজার পাশ দিয়ে দামোদর প্রবাহিত হতো তাকে বলা হতো ডামুড্যা। ঐ মৌজার নামানুসারে পরবর্তীতে এ জনপদের নাম হয় ডামুড্যা।
গোসাইরহাট উপজেলাঃ
বাংলার শেষ নবাব সিরাজ উদ্দৌলার পতন মুহূর্তে যখন ইংরেজদের আগমন প্রায় নিশ্চিত কথিত আছে যে, তখন বর্তমান গোসাইরহাট থানার মূলগাঁও গ্রামটির নিকট ব্রহ্মনন্দ গিরি নামে এক সাধু বাস করতেন। লোকে তাকে ‘গোসাই’ নামে ডাকতেন। স্নানীয় অনেকের ধারণা এ গোসাই হতেই গোসাইরহাট নামকরণ করা হয়েছ।

আপনার মতামত দিন