পদবী:সাবেক জাতীয় পরিষদ ও সংসদ সদস্য, বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, আইনজীবী আবিদুর রেজা খান ১৯২৭ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ভেদরগঞ্জ থানার দিগরমহিষখালী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
পিতার নাম আবদুল হাকিম খান। জনাব রেজা মাদারিপুর জেলার কালকিনির গোপালপুর কাজি পরিবারে বিয়ে করেন।
শৈশবে জনাব খান নিজ গ্রামের মক্তবে ও পরে চরভয়রা মাইনর স্কুলে এবং ডামুড্যা মুসলিম হাই স্কুলে পড়াশোনা করেন। ফরিদপুর এর রাজেন্দ্র কলেজ হতে তিনি গ্রাজুয়েশন ডিগ্রী লাভ করেন। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন শাস্ত্রে এলএলবি ডিগ্রী নেন।
রাজনৈতিক জীবন: ছাত্রজীবন হতে আবিদুর রেজা রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ১৯৪৬ সালে রাজেন্দ্র কলেজে পড়ার সময় তিনি ফরিদপুর জেলা মুসলিম ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। ১৯৬০ সালে ওকালতিতে যোগদানের পর সাথে সাথেই তিনি আওয়ামীলীগে যোগদান করেন ও বিভিন্ন আন্দোলনে বিশেষ ভুমিকা রাখেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তিনি অন্যতম সংগঠক হিসেবে কাজ করেন। আগরতলা ও মুজিবনগরে তিনি মাদারীপুর ও শরীয়তপুর অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধাদের শিবির তদারকী করেছেন।
১৯৭০ সালের পাকিস্তান ভিত্তিক জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে তিনি ভেদরগঞ্জ-গোসাইরহাট জাতীয় পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হয়। স্বাধীনতার পর 1973 সালের নির্বাচনে তিনি বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে জয়লাভ করেন। পরবর্তীতে 1978 সালে তিনি আওয়ামীলীগ (মিজান) এর জাতীয় কমিটির সহ সভাপতি হিসেবে কাজ করেন।
1981 সালে তিনি বিএনপিতে যোগদেন এবং ঐ সালের নভেম্বর মাসে উপনির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্ধিতায় বিএনপি টিকিটে ভেদরগঞ্জ অঞ্চলের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। 1982 সালে তিনি পুনরায় আওয়ামীলীগে ফিরে আসেন। তিনি বেশ কয়েকবার শরীয়তপুর জেলার আওয়ামীলীগের সভাপতি ছিলেন। বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নে জনাব রেজা বলিষ্ঠ ভুমিকা রাখেন।
দৈনিক জনকন্ঠে সাবেক বৈমানিক আলমগীর সাত্তার আবিদুর রেজা খান সম্পর্কে
“ তাঁর সম্পর্কে লিখতে গিয়ে বলা যায়, তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা, মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, তুখোড় একজন পার্লামেন্টারিয়ান, সুপ্রীমকোর্টের খ্যাতিমান আইনজীবী, সাবেক সংসদ সদস্য ইত্যাদি। কিন্তু সবকিছুকে ছাপিয়ে তাঁর বড় পরিচয় হলো, তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠতম ও বিশ্বসত্ম অনুসারী। সব পরিচয়ের কথা এই স্বল্প পরিসরের লেখায় সম্ভব নয় বলে শেষোক্ত পরিচয় প্রসঙ্গে কিছু কথা বলার প্রয়াস পাচ্ছি। বিগত শতাব্দীর ছয় দশকের কথা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী এবং এলএলবি পাস করে তিনি আইন ব্যবসায় যোগদান করলেন। অনেক আগে থেকে পরিচয় এবং একই আদর্শে বিশ্বাসী হওয়ার কারণে বঙ্গবন্ধু আবিদুর রেজা খানকে ঢাকা বারের আইনজীবীদের আওয়ামী লীগের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ করার দায়িত্ব দেন। প্রাপ্ত ওই দায়িত্ব পালনে তিনি যথেষ্ট সাংগঠনিক দক্ষতার পরিচয় দেন। বাঙালী জাতির ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ নেতা তাজউদ্দীন সাহেবের সঙ্গেও আবিদুর রেজার বিশ্বসত্মতায় ভরা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। কলকাতায় থাকাকালে সে পরিচয় আমি পেয়েছিলাম। পরিবার-পরিজনসহ বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর আবিদুর রেজা খান কেমন যেন নিষ্প্রভ হয়ে যান। কেমন একটা স্থায়ী বিষাদে ভর করল তাঁকে। তাঁর আর আগের উদ্যম এবং উদ্দীপনা রইল না। পঁচাত্তরের বিষাদময় ঘটনার আগের এবং পরের আবিদুর রেজা কেন একই ব্যক্তি নন। এমনটাই হওয়ার কথা। কারণ তিনি যে ছিলেন বঙ্গবন্ধুরই ডুপ্লিকেট। আসলটা না থাকলে ডুপ্লিকেটের মূল্য থাকে কতইবা। পঁচাত্তরের পরবর্তী রাজনৈতিক অরাজকতার প্রেক্ষাপটে তিনি হয়ে পড়লেন বড়ই বেমানান। নির্লোভ নিষ্কলুষ এবং সাহসী চরিত্রের মানুষ আবিদুর রেজা খান। তাঁর মতো মানুষ যেন এই বাংলায় অধিক সংখ্যায় জন্মগ্রহণ করে তবেই না বাংলাদেশ বর্তমান তমাশাচ্ছন্ন অবস্থা কাটিয়ে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় রূপনত্মরিত হতে পারবে ”
শরীয়তপুরের জন্য অবদান:
1975 সালে শেখ মুজিবর রহমান বাংলাদেশের প্রতিটি মহকুমা কে জেলায় রুপান্তর করণের পর জনাব রেজাকে নবগঠিত মাদারীপুর জেলার গভর্নরের দায়িত্ব প্রদান করেন। 1975 সালে সরকার পরিবর্তনের কারণে তিনি সে দায়িত্বে যোগদান করতে পারেননি। পূর্বমাদারীপুরকে পৃথক মহকুমায় রুপান্তরের জন্য তিনি ব্যাপক প্রচেষ্টা চালান যার ফলস্বরুপ এ শরীয়তপুর প্রথমে মহকুমা ও পরে জেলায় রুপান্তরিত হয়।
রাজনীতির সাথে তিনি সমাজ কল্যাণ মূলক কর্মকান্ডে ভূমিকা রাখেন। 1967 ও 1968 সালে ঢাকাস্থ পূর্ব মাদারীপুর জনকল্যাণ সমিতির সম্পাদক হিসেবে ঐ সময় নড়িয়ায় টর্ণেডোতে বিধ্বস্থ অঞ্চলে সাহায্য সামগ্রী সংগ্রহ ও বিতরণে তিনি বিশেষ ভুমিকা রাখেন। নিজ অঞ্চলে বহু প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা ও কিছু হাই স্কুলে রুপান্তর করণে তার অবদান রয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর জনাব রেজা ২০০৫ সালের ০৩ সেপ্টেম্বর ঢাকায় ইনতেকাল করেন। তাকে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী গোরস্থানে সমাহিত করা হয়।
আপনার মতামত দিন