কর্নেল অবঃ শওকত আলী

পদবী : সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য শরীয়তপুর ০২, সাবেক ডেপুটি স্পিকার, মুক্তিসংহতি পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এবং ৭১ ফাউন্ডেশনের প্রধান উপদেষ্টা।

শওকত আলীর জন্ম ১৯৩৭ সালের ২৭ জানুয়ারি শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার দীঘিরপার গ্রামে। তার বাবার নাম মুন্সী মোবারক আলী ও মায়ের নাম মালেকা বেগম। ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সনদপ্রাপ্ত হন এবং ১৯৭৮ সালে সুপ্রিমকোর্ট বার এসোসিয়েশনের সদস্যপদ লাভ করেন।

তিনি ১৯৫৯ সালের ২৪ জানুয়ারি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অর্ডন্যান্স কোর-এ কমিশন লাভ করেন। তাঁর দক্ষতার গুণে কর্তৃপক্ষ তাঁকে করাচির নিকটবর্তী মালির ক্যান্টনমেন্টে অর্ডন্যান্স স্কুলের প্রশিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দান করেন। ১৯৬৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি সেখানে যোগদান করেন। পরবর্তী সময়ে ক্যাপ্টেন শওকত আলী “রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য’ অভিযুক্ত (আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নামে পরিচিত) মামলায় অভিযুক্ত হয়ে ১৯৬৮ সালের ১০ জানুয়ারি তিনি গ্রেফতার হন। ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু ও ক্যাপ্টেন শওকত আলীসহ সকল অভিযুক্ত ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে মুক্তি লাভ করেন। একই বছর সেনাবাহিনী থেকে তাকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়।

১৯৭১ সালে ক্যাপ্টেন শওকত আলী মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার পর মাদারীপুর বাদামতলা সিনেমা হলে অনুষ্ঠিত এক জরুরি সভায় উপস্থি’ত নেতৃবৃন্দ  ক্যাপ্টেন শওকত আলীকে মাদারীপুর মহকুমার যুদ্ধকালীন অধীনায়কের দায়িত্ব প্রদান করেন। পরবর্তী কালে তিনি ২ নং সেক্টরে একজন সাব সেক্টর কমান্ডার হিসেবে মেলাঘরে দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধের পর বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে তিনি পুনরায় সেনাবাহিনীতে যোগদান করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে খুন হওয়ার পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে অবসরে যান। তবে অবসরের সময় তিনি কর্নেল পদে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদর দপ্তরে অর্ডন্যান্স সার্ভিসেসের পরিচালক নিযুক্ত হন।

১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগদান করেন এবং ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮২ সালের মে মাস থেকে ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় ১৬ মাস স্বৈরাচারী শাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের শাসনামলে কারাবরণ করেন।

১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং বেসরকারি সদস্যদের বিল ও বেসরকারি সদস্যদের সিদ্ধান্ত প্রস্তাব সম্পর্কিত কমিটির সভাপতি এবং নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। এছাড়া ঐ সংসদে পিটিশন কমিটি, সরকারি হিসাব কমিটি এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের সপ্তম ও ২০০১ সালে অষ্টম সংসদে তিনি পুনরায় সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর তারিখে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে নবম সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি তিনি সর্বসম্মতিক্রমে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদেও তিনি সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন।

শওকত আলী শরীয়তপুর-২ আসন থেকে ছয়বার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত তিনি মুক্তিসংহতি পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এবং ৭১ ফাউন্ডেশনের প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন।

৮৪ বছর বয়সী সাবেক ডেপুটি স্পিকার কর্নেল (অব.) শওকত আলী কিডনি, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও নিউমোনিয়ায় ভুগছিলেন। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ৫ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) থেকে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন।

ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় ১৬ নভেম্বর ২০২০ তারিখ সকাল ৯টা ৩০ মিনিটের দিকে তিনি মারা যান (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেউন)।

————————–————————–——————
সুত্র: আরটিভি, বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি গ্রন্থমালা : শরীয়তপুর (বাংলা একাডেমী)।

আপনার মতামত দিন